বিশ্বের বেশিরভাগ প্রস্ফুটিত দৃষ্টি-কর্ণ যখন একত্রে কোন এক বিশেষ বিন্দুতে দীর্ঘসময় ব্যাপী কৌতূহলপূর্ণ আবেদনে আটকে যায় তখন বুঝতে হবে সেটি অত্যান্ত উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে বিষয়টির সাথে জড়িয়ে আছে সমগ্র বিশ্বেরই ছোট -বড় ও মাঝারি রকমের নানা ইন্টারেস্ট। ঠিক তেমনটিই আমরা দেখতে পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে। গত ৫ ই নভেম্বর সমাপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্বের সকল পতি- অধিপতি ও বাহাদুর – অবাহাদুর সকলেই ভীষণ আগ্রহ ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রহর গুনেছে নির্বাচনের ফলাফলের উপর। যার পেছনে রয়েছে এক প্রবল আকাঙ্খার জায়গা, সে আকাঙ্খার অভিব্যক্তিটা নানান দেশ, নানান মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রয়োজনীয় বটে। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির দিকে সকলের মনযোগ সেটা হচ্ছে বিশ্বের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা। সমগ্র বিশ্ব যেন জ্বলন্ত আগুনের কুন্ডলীতে পরিনত হয়েছে।
এই সুখ বিঘ্নিত সংঘাতপূর্ণ পৃথিবীর বুকে ব্যাকুল বকুলের মত সমগ্র মানুষ তাকিয়ে আছে কোন শান্তি ও সুখ বহনকারী ভ্রমরের প্রতীক্ষায়। পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার সেই সুখ বহনকারী ভ্রমর হিসেবে মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পেই ভরসা রাখতে চাইছে।
বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে আঁচ প্রবাহিত হচ্ছে সেই আঁচের উত্তপ্ত দহনে ঝলসে যাচ্ছে ক্রীয়ানক থেকে অক্রীয়ানক, সাধারণ থেকে অসাধারণ সকলেই। কারণ নগর পুড়িলে দেবালয়ে এড়িয়েছে কবে কোন শহরে তেমন কোন নজির কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। আর এ জন্যই সকলের অবশেষে বোধদয় হয়েছে যে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের লাগাম যদি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় সামলানো না যায় তাহলে সেই লাগাম ছিঁড়ে গেলে সামলানো বড় বেশি দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর তখন মাথা- চুল- কান – বুক একত্রে চাপরেও কোন লাভ হয়না। তখন আর এই ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় না। সে কারণে সকলেই একত্রিত মনোভাবাপন্ন হয়ে এই ধ্বংসের প্রচন্ড বিমর্ষতার দিকে ধাবমান দেশ, মানুষ, ভূমি ও ভূমিজা রক্ষাকল্পে সকলে ট্রাম্প কার্ডের চমকেই আস্থা রাখতে চাইছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাকিয়ে আছে সমগ্র বিশ্বের মানুষ। সকলেই ট্রাম্পের প্রতি আশাবাদী যে তিনি বৈশ্বিক এই মানব সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও রাশিয়া- ইউক্রেন এবং মধ্যেপ্রাচ্যের ভয়াবহ সংঘাতের দাবানলকে প্রশমিত করে পৃথিবীর বুকে শান্তির স্নিগ্ধ সমীরণ প্রবাহিত করে মানুষ ও সমগ্র জীবকুলকে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করবেন। সেই সাথে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী বিনির্মানে সামগ্রিক ঐক্যের পথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন। কারণ সমগ্র পৃথিবী ধীরে ধীরে যে পথে এগিয়ে চলছে তাতে ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতার জন্য সেটা বড় বেশি হুমকিস্বরূপ হবে যা কল্পনাতীত।
সমগ্র পৃথিবী জুড়েই এমন একটা গোত্র বা গোষ্ঠী আছে বা থাকে যাদের কাজই হচ্ছে একে অপরের ভেতর সংঘাতের বিষবৃক্ষ রোপিত করে দূর থেকে সেই বিষবৃক্ষ থেকে নির্গত হওয়া বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করে প্রতিপক্ষের প্রাণ সংহারের বিকট চিৎকার ও কান্নার শব্দের ভেতর তারা এক পৈশাচিক আনন্দ উৎসবের আমেজ অনুভব করে। আবার যখন সেই বিষবৃক্ষ থেকে নির্গত হওয়া বিষের তীব্রতা বাতাসে মিশে গিয়ে ভাসতে ভাসতে তাদেরও প্রাণ সংকটের কারণ হিসেবে উপনীত হয় তখন তারাই আবার সংঘাত এড়াতে বিভিন্ন পথের সন্ধ্যান করতে থাকে কারণ আর যাই হোক নিজের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন তো শান্তির পথ খোঁজা ছাড়া উপায় থাকে না।
সেই যে রাশিয়া- ইউক্রেন থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী, মধ্যেপ্রাচ্য জুড়ে যেন মৃত্যুর বিভৎস উৎসবে নৃত্য করছে অন্ধকারে ডুবে থাকা পিশাচের দল। রক্ত প্রবাহের প্রতিযোগিতায় যেন এগিয়ে থাকার সংগ্রামে সকলে জোটবদ্ধ হয়ে তীব্রবেগে দৌড়ে নামছে রক্ত-ঝড়ানোর প্রতিযোগিতায়। মানুষ হয়ে উঠেছে মানুষের শত্রু। অপর দিকে শৃগালের দল পুলকিত বুভুক্ষুতা নিয়ে অপেক্ষা করছে মানুষের শরীর ভক্ষণের জন্য। মানুষের প্রাণ মানুষ কেড়ে নিচ্ছে অট্টহাসির মাতুম তুলে। তবও ঘুম ভাঙছে না কারো, তবও মুদিত চুক্ষুর ভেতর জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হচ্ছে না কারোই। এমনই যখন অবস্থা ঠিক তখনই তৃষ্ণার্ণ চাতকের মত পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষরা ট্রাম্পের ভেতরই শান্তি প্রতিষ্ঠার অবতারিক স্নিগ্ধ হস্ত দেখার চেষ্টা করছেন। সকলে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কোন উপায়ে পৃথিবীর এই সাংঘর্ষিক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষভাবে কাজ করবেন। পৃথিবীব্যাপী মুনষ্য সৃষ্ট স্বার্থসংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে আকাশজুড়ে যে ভয়ানক ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণসম মেঘ ঘনিয়েছে সকলের প্রত্যাশা ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই কালো মেঘপুঞ্জকে প্রেমের বাতাসে উড়িয়ে উড়িয়ে দরদ ও প্রেমের সমুদ্রের গভীরে নিক্ষেপ করবে। পৃথিবীর জমে থাকা সকল হিংসা বিদ্বেষের মাঝে ঢেলে দেবেন শ্রাবণের অবিরাম শীতল প্রণয়ের বারিধারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অন্য যে কোন বারের নির্বাচনের চেয়ে বৈশ্বিক প্রয়োজনের দিক দিয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বরাজনীতির যে আধুনিক মেরু-দণ্ডের নতুন মেরুকরণের হিসাব নিকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক বেশি উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি একক ভূমিকা আমরা সর্বত্র ইতিপূর্বে লক্ষ্য করেছি। সে জায়গা থেকে পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিক নির্ধারণ ও পরিবর্তনের ক্ষেত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলেই আশা করবো ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বিবেচিত সিদ্ধান্তগুলো পৃথিবীর সার্বিক মঙ্গল বিবেচনা করে বিবেচনা করবেন এবং কোন একপাক্ষিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। তার ভেতর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ নামক অপযজ্ঞের যে দামামা বেজে চলছে তার অবসান ঘটানো। ইতিপূর্বে প্রথমবার যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন আমরা দেখেছিলাম যে তিনি যুদ্ধ বা সংঘাতকে এড়িয়ে শান্তির স্নিগ্ধ পথকেই অধিক অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং ধ্বংসের বিপরীতে তিনি প্রেম এবং আনন্দকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছেলেন। এখন দেখার বিষয় তিনি কতটা দৃঢ়তার সাথে পৃথিবীর এমন ভয়াবহ সংঘাতপূর্ণ অবস্থাকে সামলে নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সহনশীলতার দিকে আগাতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঠিক ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে ঠিক তেমনি কোন প্রকার ভুল ও অবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্তও পৃথিবীকে আরো বেশি ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমরা আশা করবো তিনি যথার্থ বিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে শান্তি, ঐক্য ও প্রেমপূর্ণ সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মানেের জন্য সকলের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করবেন।