কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি ৫০ টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। ঢাকায় তিনটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জেলাতে মোট ৫০টি পলিটেকনিক/মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ৭৮৬ জন রাজস্ব প্রক্রিয়াধীন শিক্ষক দীর্ঘদিন নিয়োগ জটিলতার কারণে ৫০ মাস যাবত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন, পরীক্ষার কাজ করছেন, বোর্ডের মূল্যায়ন কাজ করছেন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন। এসকল শিক্ষক দেশে-বিদেশে ট্রেনিং নিয়ে নিজেদেরকে দক্ষ হিসেবে তৈরি করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পরিশ্রম করে যাওয়া শিক্ষকদের নিজেদের বেতন-ভাতা নেই। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই সকল শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন-ভাতার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-সমাজ ও কর্মরত শিক্ষকগণ, গত ২২ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করেন এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে, দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিকবার বেতনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে । অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিবার বেতনের প্রস্তাব ফেরত দিয়ে নোট দিয়েছে যে, আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চাকরি নিয়মিতকরণ করে নিয়ে আসতে, তারপর বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় যে, ৭৮৬ জন শিক্ষকের চাকরি রাজস্বে নিয়মিত করার জন্য ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পেশ করা আছে। গত চার বছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্মরত শিক্ষকদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে ১০১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের রাজস্বে নিয়মিত করার জন্য প্রস্তাব পাঠায় । সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব অনুমোদন করেন। ২২ মে, ২০১৯ তারিখে এই ৭৮৬ জন কর্মরত শিক্ষককে এসআরও নং ২২-আইন/২০১৪ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনের অনুরূপ এসআরও জারি করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার অনুশাসন দেন। এই অনুশাসন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের সমাপ্তির পর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে কর্মরত ৭৮৬ জনবলকে বহাল রাখার নির্দেশ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন দেয়। পরবর্তীতে জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত ১২ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। এরপর করোনার কারণে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়, এই বেতন-ভাতা আর চালু করা হয় নাই। ৭৮৬ জনের ফাইল শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় চালাচালি করছে কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে , দীর্ঘ ৫০ মাস বেতনবিহীন মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বৈষম্যের স্বীকার ৭৮৬ জন শিক্ষকের চাকরি রাজস্বে নিয়মিত করে দ্রুত বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।