Search
Close this search box.

সালথায় কমেছে কালো সোনার চাষ: হুমকির মুখে দেশি পেঁয়াজ

পাট-পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে পেঁয়াজ মৌসুমে মোট আবাদি জমির প্রায় ৯০/৯৫ ভাগ জমিতে পেয়াজ চাষ করা হয়। আর এই বিপুল পরিমাণ পেয়াজ চাষের জন্য দরকার হয় পেয়াজ বীজের। স্থানীয় ভাষায় পেয়াজ বীজকে দানা বা কালো সোনা বলা হয়। মূলত অনেক দাম ও দেখতে কালো বলে চাষিদের মুখে মুখে কালো সোনা নাম হয়ে উঠেছে। আর কিছুদিন পর থেকেই শুরু হবে গুটি পেঁয়াজ লাগানোর মাধ্যমে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন।

ছোট্ট পেঁয়াজ থেকে বেড়ে উঠা সবুজ কান্ডের উপর সাদা কদম ফুল আকৃতির কন্দটি পেঁয়াজ বীজ। এক সময় স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত বীজ ও চোরাই পথে আমদানি করা এবং সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বীজ দিয়ে উপজেলার পেঁয়াজ চাষিরা পেঁয়াজ উৎপাদন করতো। তবে অল্প জমিতে অধিক ফলন ও কৃষির আধুনিকায়নের ফলে পেঁয়াজ চাষে কৃষক ব্যবহার করছে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল পেয়াজ বীজ। উৎপাদন কম ও নানা সমস্যার কারণে বর্তমানে বাজারে দাম কমেছে স্থানীয় কালো সোনার। ফলে দেশি ঝাঁঝালো তাহেরপুরী পেঁয়াজ বীজের চাহিদা কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক দেশি পেঁয়াজ বীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, এর ফলে দেশি পেঁয়াজ হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

জানা যায়, উপজেলায় গত পাচ বছরে পেয়াজ বীজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হেক্টর যা প্রতিবছর অর্জিত হয়। তবে এই মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রা ৫০ হেক্টর থাকলেও অর্জিত হবে না। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রায় এলাকায় পেয়াজ বীজ উৎপাদন হয়। গত বছর ২২৩ জন চাষি পেয়াজ বীজের চাষ করলেও তা চলতি মৌসুমে নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকা এবং শেষ সময়ের অজ্ঞাত রোগে ফলন কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। ফলে স্থানীয় কৃষকদের বাইরের বীজের উপর নির্ভরতা বাড়ছে। তাছাড়া এই পেঁয়াজ দানা চাষে নেই সরকারি কোন অনুদান বা প্রণোদনা। 

কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানায়, আগের মত আর দেশি পেঁয়াজ বীজের চাহিদা নেই। অতি লাভের আশায় কৃষক কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ চাষ করে। কৃষকের চাহিদা না থাকায় তারা আমাদের থেকে বীজ নিতে চায় না। তাছাড়া পেঁয়াজের বীজ চাষ করে আগের মত আর লাভ পাওয়া যায় না। পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা থাকলেও পেঁয়াজ চাষে কোন সরকারি প্রণোদনা নাই। তাই  আমরা সাধারণত দেশি পেঁয়াজ বীজের চেয়ে কিং বলা হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ বীজ চাষ করি। তবে কৃষক দোকান থেকে বীজ কিনে চাষ করতে বেশি পছন্দ করে।

দেশি পেঁয়াজ আকারে ছোট তবে কড়া ঝাঁঝ থাকে, স্বাদে দারুণ। হাইব্রিড ও কিং জাতের পেঁয়াজে ঝাঁঝ কম, স্বাদও কম। বাঙালির রান্নায় দেশি পেঁয়াজ অপরিহার্য অংশ। আমরা কয়েকবছর আগেও যে পরিমান চাষ করতাম, তা বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশি পেঁয়াজ বীজ চাষে প্রণোদনা না পেলে কৃষক হয়তো অদুর ভবিষ্যতে আর বীজ চাষ করবে না। তাছাড়া পেঁয়াজ বীজ চাষে কৃষি অফিস থেকেও তেমন কোন গুরুত্ব ও সহোযোগিতা পাওয়া যায় না। দেশি পেঁয়াজ রক্ষায় আমাদের দেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করতে হবে।

সালথা সদর বাজারের সার ও বীজ বিক্রেতা মোঃ সরোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, দানার পেঁয়াজ বা গুটি পেঁয়াজ সংগ্রহ করা কষ্টকর ব্যাপার। এগুলো দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। পেলেও বাজার দামের চেয়ে প্রকার ভেদে ১০০০/২০০০ টাকা বেশি হয়। এই জন্য কৃষক তার সুবিধামত গুটি পেয়াজ সংগ্রহ করে। তবে কৃষক তুলনামূলক দেশি পেঁয়াজের চেয়ে হাইব্রিড বা কিং জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ করায় চাষীরা এই জাতের বীজ বেশি চাষ করে। আমাদের কাছে সব ধরণের বীজ রয়েছে। তাছাড়া পেঁয়াজ বীজ ও পেঁয়াজ চাষে আমরা সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন,আমাদের দেশি তাহেরপুরি পেঁয়াজের ঝাঝ বেশি, স্বাদ ও  গন্ধ তুলনামূলক ভালো। তবে কৃষক সাধারণত লাভের আশায় হাইব্রিড ও কিং জাতের পেঁয়াজ চাষাবাদ করে। তাই তাদের আগ্রহ হাইব্রিডে। পেয়াজবীজ চাষে কৃষকের কোন প্রণোদনা নাই। তাছাড়া ছত্রাকের আক্রমণের ফলে ফলন একদম কম হয়। এজন্য কৃষক অনেক সময় মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমরা কৃষকদের সাথে কথা বলব, তাছাড়া প্রণোদনার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।