একটি ভিডিয়োতে দেখলাম একজন ঘুমন্ত বৃদ্ধ ফিলিস্তিনি নারীর উপর ইসরায়েলি সেনারা লেলিয়ে দিয়েছে একটি হিংস্র কুকুর।যে কুকুরটি আক্রমণ করেছে সেই কুকুরটির মাথায় একটি ক্যামেরা বাঁধা ছিল।ওই ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর মানুষের মানবিক সত্তাকে আঁচড়ে দিয়েছে ওই দৃশ্যটি। মূলত ইসরায়েলি সেনারা নারীটিকে তার বসবাসের বাড়িটি ছাড়তে বলায় সে নারী তার বাড়ি ছাড়তে অস্বীকার করার কারণেসেনারা তার উপর কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে।
এই যে ঘটনাটি এটি কত বড় বর্বরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের ধারণা দেয় আমাদের একটু চিন্তাকরলেই আমরা তা সহজেই অনুমান করতে পারি অথচ কেউ যেন কিছু দেখছে না শুনছে না।কারো কোনভ্রক্ষেপ নেই সমগ্র পৃথিবী যেন এক নিস্তব্ধ বধিরতায় ঢেকে গেছে।আগের যুগে না হয় মিডিয়া ছিলো না বলে যুদ্ধবিগ্রহে খুন, হত্যা, রক্ত বিশ্ববাসী বা বিশ্বের প্রাণভোমরারা দেখতে পেতো নাকিন্তু এখন তো সব সূর্যের মতউজ্জ্বল ও পরিস্কার ভাবে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, তারপরও কেন সবাই না দেখার ভানকরে মুখ লুকিয়েথাকে নিজের স্বার্থের জীর্ণ কুটিরে।
আমরা অবশ্যই এই বিপর্যয়, এই হত্যা, খুন, সংঘাতের অবসান চাই।আমরা ঐ অঞ্চলের মানুষের মানসিকঅবস্থা উপলব্ধি করে ব্যাথিত হৃদয়ে বিশ্বের সমঝোতা কতৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই তারা যেন স্বার্থেরচেতনা জাগ্রত ঘুমের অভিনয়ের পারদর্শিতা না দেখিয়ে প্রচন্ড বিবেকের চপেটাঘাতে জাগ্রত হয়ে যথাযথহস্তক্ষেপে উল্লেখযোগ্য সমাধানে বন্ধ করে দেয় এই রক্তের জোয়া।মানুষের ক্রন্দন, রক্তের প্রবাহে বিশ্বমাতারহৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয় কেঁপে উঠে সমগ্র মানবিক প্রাণ।তাই সকলের একত্রিত সিদ্ধান্তে বন্ধ হোক এই যুদ্ধেরদামামা, পৃথিবীব্যাপী বেজে উঠুক শান্তির তূর্য।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস অনেক পুরোনো।মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কী অটোমানসাম্রাজ্যের পতনের পর সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে মাছের ভাগার মত ভাগবাটোয়ারা করে নেয় ব্রিটেন ও ফ্রান্স।১৯১৭সালে জেমস বেলফোর ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় যা ইতিহাসে বেলফোরঘোষণা হিসেবে পরিচিত। বেলফোর ঘোষণার পর ইউরোপ থেকে বহু ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে বসবাস করতেথাকে।
আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের ইহুদি নিধনের মধ্যে দিয়ে ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারপ্রয়োজনও বাড়তেথাকে। আর সে কারণেই ১৯৪৮ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকেদ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার একচতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পায় ভূমিরপ্রায় ৫৭ শতাংশ এবং ফিলিস্তিনিরা পায় ৪৩ শতাংশ এবং ১৯৪৮ সালের ১৪ ই মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেই যে সংঘাতের সূত্রপাত যা আজও চলমান রয়েছে।জীবনের পরজীবনের যুদ্ধাহত মৃত্যু, ধ্বংস, মানসিক বিপর্যয় অথচ এই সংঘাতের কোন নির্দিষ্ট সমাধান হচ্ছে না।বিশ্ব বিবেকনিভৃতে ঘুমিয়ে দেখছে তাদের স্বার্থের ঘুটি কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে আর অপরদিকে ঝড়ে পড়ছে হাজার হাজার তাঁজা প্রাণ। জাতিসংঘের মত বড় বড় শান্তির হাঁকডাক ছাড়া প্রতিষ্ঠানও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেএই মৃত্যু বিভৎসের ভয়ানক থ্রিলার।যুদ্ধের এই প্রচন্ড হিংস্রতার অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বের যারা অগ্রপতিতারা কেউই চাচ্ছে না এই সংঘাতের অবসান হোক। তারা নিরবে ঘুমের ভান করে জেগে জেগে দেখছে লাশেরস্তুপ কত দীর্ঘ ও উঁচু হলো।
যখন কোন অঞ্চল দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যায় তখন সে অন্চলের মানুষগুলো ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ও মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত হতে থাকে। যুদ্ধরত বা যুদ্ধাক্রান্ত দেশের ভেতর এমন একটিপরিস্থিতি তৈরি হয় যা তারা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করলেও তাদের চিন্তা ও অস্তিত্বে একবিরাট নেতিবাচক প্রভাববিস্তার করে। যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি যাদের উপর পড়ে তারা হচ্ছে শিশুরা।এই যে ভংয়কর যুদ্ধ পরিস্থিতিরভেতর দিয়ে বেড়ে উঠছে যে শিশুরা সে শিশুদের মানবিক বোধের বিকাশ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
যে বয়সে বই খাতা নিয়ে নির্বিঘ্নে স্কুলে যাওয়ার কথা নতুন নতুন শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ভীত মজবুত করারকথা। প্রাণ ভরে উচ্ছ্বাসে বাঁচার কথা।সে বয়সে তারা গোলাবারুদ, বোমা, পৃথিবীর স্বার্থপর রাজনৈতিকউদ্দেশ্যবাদীদের স্বার্থপর আচরণ, বিভীষিকাময মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠছে। ঐ শিশুদের নিজেদের ভেতরভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কোন শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠবে সেটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল উভয় দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন।
এর আগে একটা সংবাদে দেখেছিলাম একটি শিশুর সামনে তার মা বাবাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে কিন্তুশিশুটিকে হত্যা করা হয়নি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।এই যে শিশুটি তার চোখের সামনে তার মা বাবাকে খুনহতে দেখেছে সে তার জীবন থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়কে হারিয়েফেলেছে এই মানসিক ট্রমা থেকে কি সেকখনো বের হতে পারবে? না কখনোই পারবে না।তার ভেতরে ধীরে ধীরে যে প্রতিশোধের স্ফুলিঙ্গ বড় হতে হতেআগ্নেয়গিরির মত ভয়াবহ রূপ নিবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সেও পরবর্তী সময়ে এই হত্যার প্রতিশোধ নিতেচাইবে। তাহলে ভাবুন এই যুদ্ধের শেষ কোথায়? এই প্রতিহিংসার শেষ কোথায়?
কুরুক্ষেত্রের মহারণে আর্যাবরতের অজস্র প্রাণের যে চিতা রচিত হয়েছিলো সে চিতাকে ন্যায়ের বিশুদ্ধ চিন্তারপ্রকোষ্ঠে সৃজিতকরবে যে মহারথীগণ তারাই সেদিন হয়ে ওঠেছিল পক্ষপাতদুষ্ট। তারাই সেদিন যুদ্ধ করেছিলেনহাতে রক্তের দাগ নিয়ে।কুরু ভূমির বুকে তারাই সেদিন রচনা করেছিলিন মৃত্যুর সজ্জিত সজ্জা।সেদিন যদিদেবব্রত মহামহিম ভীষ্ম ও গুরু দ্রোণাচার্য শক্ত হস্তে কঠোর চিত্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে এতবড় প্রাণের বিসর্জন হয়তো এড়ানো যেতো।তারা যতি দুর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধ করতে স্বীকৃতি না জানাত তাহলে দুর্যোধনকোন ভাবেই এই যুদ্ধের জন্য আগ্রাসী হতে পারতো না।
ঠিক তেমনি এখনও যারা বিশ্বপ্রতীম মহামান্যগণ রযেছে তারাও যদি নির্ভীক মনোভাবে সাম্যতার যথাযথমাপকাঠিতে সঠিকসিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমঝোতার সিদ্ধান্ত প্রসব করে, তাহলে এই যুদ্ধ নামক পৃথিবীরবিষফোড়াকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।শক্ত হাতুড়ির আঘাতে পাষাণের মূর্তি পর্যন্তচুরমার হয়ে যায় কিন্তু মুষ্টির আঘাতে পাষাণের কোন বিভ্রান্তি হয়না কেবল হস্তইআঘাতপ্রাপ্ত হয়।
তাই ধর্ম, বর্ণ, দল, মত, নির্বিশেষে শুধুমাত্র মানবিক আবেদনের আত্মিক জাগরণে বিশ্বের সকলরথী-মহারথীগণ একত্রে ও সম্মিলিত কঠোর হস্তক্ষেপে বন্ধ করে দিক এই মৃত্যু- বিভৎসের ভয়ানক মিছিল।