Search
Close this search box.

পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের শতকোটি টাকার সম্পদ ক্রোক

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে থাকা ২২টি ফ্ল্যাট, ২টি বাড়ি, পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার প্লট ও পরিবারের নামে থাকা সব জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাপত আওয়ামী লীগের আমলে এই সম্পদ অর্জন করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে, শেখ হাসিনাকে ফুফু বলে ডাকতেন।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

দুদক ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফতের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান। এই আবেদনের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের নামে থাকা বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি ক্রোকের আদেশ দেন।

আদালতে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নামে রাজধানীর গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। গুলশান-২–এ রয়েছে ২০ তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি। এর বাইরে পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর ও বাড্ডায় তাঁর ২৫ কাঠার জমি রয়েছে।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদের নামে রাজধানীতে পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর চারতলা একটি বাড়িও রয়েছে তাঁর। এর বাইরে তাঁর নামে আরও ১৩ কাঠা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক।

চৌধুরী নাফিসের ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফতের নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকা সাতটি ফ্ল্যাট ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এ ছাড়া এই চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি অর্জন করা হয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে।

প্রসঙ্গত আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন খাতের অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন নাফিজ সরাফাত। শুরুতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। পরে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্কের চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। গোপালগঞ্জের এই ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ‘ফুফু’ বলে সম্বোধন করতেন। গোপালগঞ্জের মানুষ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ‘কাজিন’ হিসেবে পরিচয় দিতেন সবার কাছে।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত, যিনি পরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১৭১ দশমিক ১৬ কাঠার একটি প্লট এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দেয় রাজউক। এতে সরকারের ক্ষতি হয় ৭৭ কোটি টাকা।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মূল নকশায় প্লটটি ছিল ‘সেকেন্ডারি স্কুল’। শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়’ করতে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর নাফিজ সরাফাত আবেদন করলে রাজউকের পর্ষদ সভায় তা উপস্থাপিত হওয়ার পর ২৬ ডিসেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়।

গুলশানের ১০৩ নম্বর সড়কের একটি প্লটের মালিক নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সাহিদ চৌধুরী। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই এটিকে বাণিজ্যিক প্লট করার আবেদন করলে তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের হস্তক্ষেপে রাজউক এতে অনুমোদন দেয়। অথচ প্লটটি ‘বাণিজ্যিক ব্যবহারের আওতাভুক্ত নয়’ বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল রাজউক। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাজউক অনুমতি দিয়ে বলেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এ অনুমতি দেওয়া হলো।